Choose your product from the mega showcase from thousands of sellers
BD Trade Blogs
> Blogs > সাম্প্রতিকী > করোনা যুদ্ধ -৬

করোনা যুদ্ধ -৬


অসীম তরফদার

সামনের দিনগুলোতে কি হতে চলেছে, কোনো ধারণা কি করতে পারছি আমরা? আমি পারছি না। অজানা শঙ্কায় কেমন আঁতকে উঠছি শুধু ! ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি সাত দফায় বাড়িয়ে ৩০ মে পর্যন্ত দুই মাসেরও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর হঠাৎ করেই সব খুলে দেবার ঘোষণা এলো। আর ঘোষণাটি এমন এক সময়ে এলো যখন সংক্রমণের মাত্রা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিছুদিন পূর্বে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে যে হারে আক্রান্তের  সংখ্যা ছিলো এখন সেই হার প্রায় দ্বিগুন ! ঈদের আগে শক্ত অবস্থানের ঘোষণা দিয়ে পরবর্তীতে আবার একেবারে বিনা বাধায় সবাইকে যার যেখানে খুশি যেতে দেয়া হলো। টিভি ও পত্রিকার  খবরে আমরা দেখতে পেলাম কি প্রচন্ড রকমের গাদাগাদি আর ঠাসাঠাসি করে মানুষ জন ঢাকা ছেড়ে গেলো। ঈদের পরে আবার সেই একই রকমের পরিস্থিতির মধ্য  দিয়েই সবাই ফিরে আসছে ঢাকায়।

এমনিতেই আক্রান্তের হার ক্রমবর্ধমান; সেই অবস্থায় এই যাওয়া আর আসার ফলাফল কি হতে চলেছে, সেটা সত্যি ভাবতে পারছি না। আর এটাও বুঝতে পারছি না, দুই মাসেরও অধিক কাল ধরে সকল প্রকার আয়ের পথ বন্ধ রেখে আমরা যারা ঘরে থাকলাম; আমাদের এতো দিনের সকল ত্যাগ কি তবে ব্যর্থ হতে চলেছে? তবুও ভালো, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো খুলেনি। আর যাই হোক, করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা স্পষ্টতঃ নিম্নগামী না হওয়া পর্যন্ত  প্রতিষ্ঠান খুলে দেবার মত হঠকারী সিদ্ধান্ত সরকার নেবে না বলেই আমরা বিশ্বাস করতে চাই। 

করোনা সহসা যাবে না, সেটা আমরাও বুঝতে পারছি। মাসের পর মাস সব কিছু বন্ধ করে রাখা, আয়ের পথ রুদ্ধ করে রাখা সম্ভব নয়, সেটাও বুঝি। পৃথিবীর নানা দেশ লক ডাউন তুলে দিয়েছে, সব কিছু খুলে দিয়েছে বা দিচ্ছে; এই খবর গুলো আমরাও শুনছি, দেখছি । তবে কোন দেশ কোন পরিস্থিতে লক ডাউন তুলেছে,  সেটাও আমরা খেয়াল করেছি। ওই সব কিছুর আলোকে এবং দেশে আক্রন্তের উর্দ্ধ হারের দিকে তাকিয়ে আমরা বুঝতে চেষ্টা করছি, ঠিক এই মুহূর্তে সব কিছু খুলে দেয়াটা আমাদেরকে আরো অনেক বেশি গভীর সংকটে ফেলবে নাতো ?

শুরু থেকেই আমাদের চারপাশে প্রকট হয়ে উঠেছে চিকিৎসা সংকট শুরুর দিকে চিকিৎসক ও স্বাস্থকর্মীদের সুরক্ষা সামগ্রীর অপ্রতুলতা ও নানা অব্যবস্থাপনার খবর আমরা জেনেছি। করোনা ব্যাতিত অন্যান্য রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও সংকট কতটা ভয়াবহ সেটা অনেক ভুক্তভোগীর অভিজ্ঞতা থেকে আমরা জেনেছি। আমরা জেনেছি এম্বুলেন্স করে এ হাসপাতাল ও হাসপাতাল ঘুরে ঘুরে কোথাও ভর্তি হওয়া দূরে থাকুক জরুরি বিভাগেও সামান্য কোনো চিকিৎসা না পেয়ে এম্বুলেন্স এর ভেতরেই জীবনাবসানের নির্মম অভিজ্ঞতা। এখন হয়ত সে অবস্থা অনেকটা ভালো; কিন্তু যথেষ্ট কি? এখনই আইসিইউ ও ভেন্টিলেটরের সীমিত সংখ্যা বা অপর্যাপ্ততার কথা আমরা শুনছি। সৃষ্টিকর্তা না করুন, যদি আগামী কিছুদিন আরো ব্যাপক হারে সক্রমণ ছড়িয়ে পরে তাহলে সেই পরিস্থিতি সামাল দেবার সক্ষমতা ও প্রস্তুতি আমাদের আছে কি? সেই সক্ষমতা ও প্রস্তুতি না থাকলে আর আশংকা জনক ভাবে সংক্রমণ বেড়ে গেলে ইতালির প্রধানমন্ত্রীর মতো করে আমাদেরকেও সাহায্যের জন্য তাকিয়ে থাকতে হবে ওই আকাশের দিকে ! 

আমি খুব আশাবাদী মানুষ। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের সরকার সকল তথ্য উপাত্ত  বিশ্লেষণ করে, বিশেষজ্ঞ মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে, জনগণের সার্বিক কল্যাণের কথা ভেবেই সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন। প্রয়োজনে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবেন। আরও বিশ্বাস করি, আমাদের প্রার্থনায়ই হোক আর বিজ্ঞানের উৎকর্ষের দ্বারাই হোক আমরা করোনাকে খুব শীঘ্রই পরাস্ত করে ফিরতে পারবো আমাদের স্বাভাবিক জীবনে, কর্মমুখর জীবনে ।


সাহিত্য >> সাম্প্রতিকী